সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিনটি সিটি
করপোরেশন নির্বাচনে নিয়ে বিএনপির ‘নৈতিক জয়’ হয়েছে বলে মনে করেন দলটির
জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন মাঝপথে ভোট বর্জন করে বিএনপি ‘আত্মসমর্পণ’ করেছে।
ঢাকায় টিসিবি মিলনায়তনে আয়োজিত বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নিয়ে তাঁরা এসব মন্তব্য করেন।সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সুলতানা ইসলাম নামে একজন দর্শক।
এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং হান্নান শাহের মধ্যে।
হান্নান শাহ বলেন এই নির্বাচনে অল্পকিছু ভাগ্যবান মানুষ ঠিকমতো ভোট দিতে পেরেছেন, এ নির্বাচন ছিল প্রহসনের নির্বাচন।
আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া ভোটের মাধ্যম যে ‘নীরব বিপ্লব’ করার জানিয়েছিলেন সেটি কোন কাজে লাগেনি ।
তিনি বলেন , “উনি (খালেদা জিয়া) সৈন্য নামিয়ে দিলেন। এর পরে দেখা যায় সেনাপতি দশটার সময় গিয়ে আত্মসমর্পণ করল। এটা যুদ্ধ হয়? ”
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া দর্শকরা নির্বাচন নিয়ে তাদের মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
এ প্রসঙ্গে একজন দর্শক বলেন তিনি একটি ভোট কেন্দ্রে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন সেই ভোটকেন্দ্রে তিন হাজারের মত ভোটার থাকলেও মাত্র ছয়শ জন ভোট দিতে এসেছিলেন।
আরেকজন দর্শক বলেন, “অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যমত ভোট দিতে পারলেও অনেকে পারছে না। কিন্তু এই ভোট দিতে কেন পারছে না সেটাই কি আমাদের মূল উদ্বেগ হওয়া উচিত না?”
অনুষ্ঠানের অন্যতম প্যানেলিস্ট মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, “ভোট নিয়ে জালিয়াতি অনেক জায়গায় হয়েছে, আবার অনেক জায়গায় হয়নি। আমি মনে করি সত্যটা কোন মাঝামাঝি জায়গায় আছে।”
ভোটের অধিকার প্রসঙ্গে আরেকজন প্যানেলিস্ট ডেমোক্রেসিওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রেহমান বলেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে।
এনিয়ে একজন দর্শক মন্তব্য করেন বিএনপির ভোট বর্জনের খবর প্রচারের পরেই নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কমে যায় এবং সেই সাথে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তিনি বলেন , “আমাদের দেশে এটা সবক্ষেত্রেই হয়। এক দল মাঠ ছেড়ে গেলে তখন বিশৃঙ্খলা চলে আসে।”
বিএনপি নেতা হান্নান শাহ অভিযোগ করেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও সরকার-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সিল মেরেছেন।
বিএনপির বিকল্প পথ কী?
অনুষ্ঠানে এলিনা রাহী ইরা নামে একজন দর্শক প্রশ্ন করেন, “সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ মাঝপথে বর্জন করার পর বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সামনে এখন কী রাজনৈতিক বিকল্প রয়েছে?”
বিএনপি নেতা হান্নান শাহ মনে করেন ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত সবাই ভালোভাবে গ্রহণ করেছে । বিএনপির এই নেতা বলেন আপাতত দলটির হরতাল বা অবরোধের মতো কর্মসূচীতে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই।
হান্নান শাহ বলেন, “এতকিছুর পরেও আমরা কিন্তু রাস্তায় যাইনি। আমাদের বিরুদ্ধে যে বলা হয় আমরা জঙ্গি , এটা করি ওটা করি – সেটা কিন্তু এবার হয় নাই।”
তিনি বলেন হরতাল বা অবরোধের মতো কর্মসূচী আসবে কিনা সেটি নির্ভর করবে ভবিষ্যতের পরিস্থিতির উপর।
বিএনপির বিকল্প নিয়ে দর্শকদের মধ্যেও ভিন্নমত লক্ষণীয়।
এ প্রসঙ্গে একজন দর্শক মন্তব্য করেন, “বিগত দিনগুলোতে বিএনপি মানুষ পোড়ানোর যে আন্দোলন করেছে তার ফলে আন্দোলন করে তারা আর জনসমর্থন পাবে না।”
আরেকজন দর্শক মন্তব্য করেন, “এখন সরকার বিএনপিকে যে অবস্থায় রেখেছে, সবকিছু হিসেব করার পরে এটা ঠিক যে বিএনপির আর পেছনে ফিরে আসার কোন উপায় নেই। বিএনপিকে আন্দোলন করেই এর একটা বিহিত ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে বিএনপির পিছু হটার কোন সুযোগ নেই।”
এ পর্যায়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ধারণা করেন যে বর্জনের পরেও বিএনপি যে পরিমাণ ভোট পেয়েছে সেটি দলটির জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হতে পারে। বিএনপিকে পুনরায় সংগঠিত হতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, “ বিএনপিকে তার রাজনীতি বদলাতে হবে। পোড়ানোর রাজনীতির জন্য মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”
তালেয়া রেহমান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাথে একমত পোষণ করেন যে নতুন লোক নিয়ে হলেও বিএনপিকে পুনরায় সংগঠিত করে নিজেদের নতুন করে তুলে ধরতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “সবাই শান্তি চায়। সেই একইভাবে আন্দোলনে ফিরে যাওয়া মনে হয় উচিত না। সেটা সফল হয়নি।”
এ বিষয়ে একজন দর্শক বলেন “আমরা বিএনপিও বুঝি না, আওয়ামীলীগও বুঝি না। শুধু বুঝি আমরা সাধারণ জনগণ, আমাদের বাঁচার অধিকার আছে। আমরা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা চাই।”
এ প্রসঙ্গে শাহীন আনাম বলেন দেশের রাজনীতি যেন সংঘাতপূর্ণ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি বলেন, “আসলে দেশের মানুষ হরতাল অবরোধ চায় না, শান্তি চায়। বিএনপি পরবর্তীকালে যাই করুক একটা সমঝোতার মাধ্যমে একটা মাঝামাঝি জায়গায় আসতে হবে।”