বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। অথচ আত্মহত্যা প্রতিরোধ্য। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ সম্ভব।
বিশেজ্ঞদের মতে, যারা এক সময় আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ
আজ বেঁচে আছে বলে খুশী। এই ব্যাপারে তাদের মতামত হচ্ছে, তারা আসলে জীবন
শেষ করে দিতে চায়নি -শুধু যন্ত্রণাটা দূর করতে চেয়েছিল৷
অষ্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, কানাডা, কলম্বিয়া, ফিজি, ঘানা, হংকং, ভারত,
আয়ারল্যান্ড, ইতালী, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পাকিস্তান,
স্কটল্যান্ড, শ্রীলংকা, সুদান, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ
দিবস প্রতিপালনসহ আত্মহত্যা প্রতিরোধে নানাবিধ জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম
পরিচালনা করলেও আমাদের দেশে তা করা হচ্ছে না।
২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের আত্মহত্যা
পরিস্থিতি ভয়াবহ। তথ্যে জানা যায়, আত্মহত্যায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান
দশম। যা ২০১১ সালে ছিল ৩৮তম।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে গত ৬ বছরে সারা দেশে ৫৯ হাজার ৭৬০টি আত্মহত্যার
ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আত্মহত্যা প্রতিরোধে তেমন কোনো জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপ
এখনো গৃহীত হয়নি।
আত্মহত্যাপ্রবণ বেশিরভাগই ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী। ২০১৩ সালে শুধু বিষপান আর ফাঁসীতে ঝুলে আত্মহত্যার ঘটনা ১০২৯টি।
বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে ৭ দশমিক ৮ জন আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাই বেশি।
কাউন্সেলিং এবং যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে কাউকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফেরানো
সম্ভব। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতিমাত্রায় বিষণœতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা
আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হন। তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে
রয়েছে।
আত্মহত্যা কেবল যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে তাকেই না এর প্রভাব পরে প্রতিটি মানুষের ওপর।
কারো মধ্যে আত্মঘাতী প্রবণতা দেখা দিলে বুঝতে হবে সম্ভবত ক্লিনিক্যাল
ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, প্রসবজনিত অবসাদ, পিটিএসবি অথবা এমন কোনো রোগে
ভূগছেন, অর্থাৎ এমন কোনো সমস্যা থাকলে ভাবতে হবে প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্কে
কেমিক্যাল ভারসাম্যহীনতা রয়েছে এবং এ কারণেই সম্ভবত সোজাসুজি কিছু ভাবতে
পারছে না। এটা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। তবে তাকে বোঝাতে সে দূর্বল নয়।
তার কেবলমাত্র কিছু চিকিৎসা প্রয়োজন। তাকে কখনো একা ভাবার সুযোগ দেয়া যাবে
না। ভালো কিছু চিন্তা করার দিকে ধাবিত করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে অন্ধকার
তাড়িয়ে এক সময় সূর্য্য উদিত হবে। অতএব তাদের মধ্যে প্রত্যাশা থাকতে হবে।
সন্তান আত্মহত্যার কথা বললেই সতর্ক হতে হবে। এমন কিছু বলা ঠিক হবে না যেন
সে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়, কেবল মঙ্গল চাইলেই হবে না তাকে বুঝতে হবে।
সমাজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনসচেতনতামূলক শিক্ষা প্রদান ও শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যার ভয়াবহতা ও প্রতিরোধের নানা দিক নিয়ে সভা-সেমিনার
চালু করা প্রয়োজন বলেও মত দিচ্ছেন তারা।
তরুণ-তরুণীরা তাৎক্ষণিক আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহত্যা করে। আবেগ কী করে দ্রুত
নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়ে স্কুল-কলেজ কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা। তাদের
স্মরণ করিয়ে দিতে হবে জীবনের চেয়ে কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিছুই না।