রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমানদের পর এবার ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাণভয়ে পালাতে হচ্ছে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ কাচিনের আদিবাসী খ্রিষ্টানদের। চীনের সীমান্তবর্তী এ রাজ্যটিতে শুক্রবার অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। স্বাধীনতাকামী কাচিন ইনডিপেনডেনস আর্মির (কেআইএ) বিরুদ্ধে এ অভিযান ও তুমুল সংঘর্ষের কারণে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চার হাজারের বেশি নারী-পুরুষ ও শিশু পালিয়ে চীন সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। গত বছরের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর অভিযান ও হত্যাযজ্ঞের কারণে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগ উঠেছে। ওই অভিযোগ মাথায় নিয়ে খ্রিষ্টানদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করল অং সান সু চির দেশের সেনাবাহিনী। খবর বিবিসি ও এএফপির।
কাচিন প্রদেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে জড়িয়েছে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও স্ব্বাধীনতাকামী সশস্ত্র কাচিন ইনডিপেনডেনস আর্মির (কেআইএ) সদস্যরা।
সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করায় কাচিন জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে মালিখা নদী পেরোতে হচ্ছে তাদের। ওপারে জঙ্গল বা চীনের সীমান্ত এলাকায় নিতে হচ্ছে আশ্রয়।
শুক্রবার জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অপারেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচএ) প্রধান মার্ক কাটস জানান, গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে চার হাজারের বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর আগে গত জানুয়ারিতে ওই অঞ্চলে সংঘর্ষ-সহিংসতার কারণে আরও ১৫ হাজার মানুষ উদ্বাস্ত হয়েছে।
স্থানীয় এনজিও জাস্টিস অ্যান্ড পিস কমিশনের কর্মকর্তা ভিনসেন্ট শ্যানলং বলেন, ১৭ জানুয়ারি থেকে সেনাবাহিনী ও কেআইএর সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। প্রত্যেক দিন সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। গত দু'দিন ধরে এ সংঘর্ষ তীব্র হয়েছে। গ্রামবাসী জঙ্গলের দিকে ছুটছে এবং আমি জানি না তারা এখন কোথায় আছে।'
মাইতকিনা ভিত্তিক সংগঠন পিস টকস ক্রিয়েশন গ্রুপের কর্মকর্তা ইউ লামাই জাম লা বলেন, 'আমি দেখেছি, গ্রামবাসী যখন তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, তাদের কারও শরীরে কাপড় ছাড়া সঙ্গে কিছুই নেই। কারও মাথায় বোঁচকা।'
২০১১ সালে মিয়ানমার সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইনডিপেনডেনস আর্মির মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি ভেঙে যায়। এরপর থেকে কাচিন রাজ্যে অভ্যন্তরীণ গৃহহারা মানুষের সংখ্যা ৯০ হাজার অতিক্রম করেছে।
রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে মিয়ানমার। সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইনের সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া শিন ও শান রাজ্যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে মিয়ানমারের শত শত মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে অথবা ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কাচিন রাজ্যেও শুরু হলো সংকট।
source link: click here