সংবাদ সংগ্রহে চন্দন রোজারিও :
ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ধনী আমানসিও ওর্তেগা। বিশ্বের ধনীদের তালিকায় চার নম্বরে। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী আশি বছরের ওর্তেগার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। রেল শ্রমিকের সন্তান ওর্তেগার এই বিশাল অর্থবিত্তের রহস্য কি! কিভাবে জিরো থেকে বিলিওনেয়ার হলেন তিনি! এর জবাব হচ্ছে ‘জারা’। মানে বিশ্বখ্যাত পোশাক ব্রান্ড জারার মালিক তিনি। চলতি বছর জারার আয় হয়েছে ১৩৬ কোটি ডলার।
ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ধনী আমানসিও ওর্তেগা। বিশ্বের ধনীদের তালিকায় চার নম্বরে। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী আশি বছরের ওর্তেগার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। রেল শ্রমিকের সন্তান ওর্তেগার এই বিশাল অর্থবিত্তের রহস্য কি! কিভাবে জিরো থেকে বিলিওনেয়ার হলেন তিনি! এর জবাব হচ্ছে ‘জারা’। মানে বিশ্বখ্যাত পোশাক ব্রান্ড জারার মালিক তিনি। চলতি বছর জারার আয় হয়েছে ১৩৬ কোটি ডলার।
জারা
নিয়ে ওর্তেগার গল্পও বিস্ময়কর। ওর্তেগার জন্ম ১৯৩৬ সালে নর্থ স্পেনে। বাবা
অ্যান্টেনিও ওর্তেগা রদ্রিগজ রেলওয়ে বিভাগে শ্রমিক ছিলেন। মা জোসেফ জোয়ানা
হারনান্দেজ বিভিন্ন বাসায় কাজ করে অর্থ উপার্জন করতেন। এমনই দরিদ্র
পরিবারে বেড়ে উঠেছেন ওর্তেগা। তবে পড়াশোনায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহী ছিলেন
তিনি। পড়াশুনার খরচ জোগাতেই মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকের
কাজ করেছেন ওর্তেগা। কিন্তু কখনও কোনো কাজকে ছোট করে দেখেননি। তিনি ‘গালা’
নামে এক দোকানে চাকরি নেন। সে দোকানে শার্ট, ক্যাপসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি
করা হতো। এখানেই কখনও সেলস বয়, কখনও ডেলিভারী বয়ের কাজ করতেন ওর্তেগা।
বাসায় বাসায় শার্টসহ পোশাক ডেলিভারী দিতে গিয়ে তার মাথায় ঢুকে নিজেই ব্যবসা
করার। ষোল বছর বয়সে একদিন স্বল্প খরচের মধ্যে একটি পোশাক বিক্রির দোকানই
দিয়ে বসেন ওর্তেগা। কম খরচের হলেও দোকানে মানসম্মত ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের
পোশাক রাখেন তিনি। দোকানের নাম দেন জারা। নিজেই তৈরি করতেন নিত্ত্যনতুন
ফ্যাশনের পোশাক।
স্পেনের লা করোনাতে ১৯৭৫ সালে শুরু করা
সেই জারা এখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফ্যাশন হাউসে পরিণত হয়েছে। ৪২ বছর ধরে
ফ্যাশন ব্যবসাকে জনপ্রিয় করেছেন বিশ্বব্যাপী। বলা হয়, ইউরোপ ফ্যাশনকে
ওর্তেগা একাই নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। নিশ্চুপ থেকে নিজের ব্যবসাকে
ছড়িয়েছেন বিশে^র ৮০টিরও বেশি দেশে।
এখন শুধু পোশাক ব্যবসাই নয়, ওর্তেগা
ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছেন। এর আগে ১৯৬৩ সালে তিনি এবং তার প্রয়াত স্ত্রী
রসিলা মিরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন কাপড় তৈরির প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স। তবে
ইন্ডিটেক্স গ্রুপের অন্যতম ব্রান্ড ‘জারা ফ্যাশন হাউজ’।
নিজের ব্যবসা শুরু সম্পর্কে ওর্তেগা বলেন,
ব্যবসার ভাবনার শুরুতেই খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করি।
কারণ বাজার ধরতে তাদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। আসল কাজ তারাই করবে। আমি নিজেও
একজন খুচরা বিক্রেতা। বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন হাউজে আমি নিজেই পণ্য সরবরাহ
করি।
ফ্যাশন ব্যবসায় নিজেকে সেরা বানানোর রহস্য
সম্পর্কে ওর্তেগা বলেন, ক্রেতাদের আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তারা
কি চায় তা বিবেচনা করেই পণ্য প্রস্তুতে মনোযোগ দেই। আর বাজারে তা দ্রুততম
সময়ে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি।
ওর্তেগা ১৯৭৫ সালে ‘জারা’ চালুর পর আর
পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জারা’র পর আরেক ব্র্যান্ড গোয়া ও সেমলর প্রতিষ্ঠা
করেন ১৯৭৭ সালে। জারা শুরুর ১০ বছর না যেতেই পর্তুগালে প্রথম আন্তর্জাতিক
স্টোর খুলে বসেন। নিউইয়র্কে প্রথম জারার স্টোর আসে ১৯৮৯ সালে। এর এক বছরের
মাথায় ফ্রান্সে প্রথম জারার স্টোর স্থাপিত হয় ১৯৯০ সালে। এরপরই পল অ্যান্ড
বিয়ার ও মাসিমোডুত্তি শুরু করেন ১৯৯১ সালে। ২০১৬ সালে বিভিন্ন দেশে
ইন্ডিট্রেক্সের নতুন ২৭৯টি স্টোর খোলা হয়। এরমধ্যে জারার নতুন স্টোর ৫১টি।
বর্তমানে বিশ^জুড়ে জারার নিজস্ব স্টোরের সংখ্যা ২২০০। জারা ফ্যাশনের সঙ্গে
বিশ^জুড়ে জড়িত রয়েছেন ১ লাখ ৬২ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ইন্ডিটেক্সের প্রধান নির্বাহী পাবলো ইসলা
বলেন, প্রতি ত্রৈমাসিকে জারার রেভিনিউ বেড়েছে ১৭ ভাগ। এমনকি জরিপে দেখা
গেছে, প্রতিদিন গড়ে একটি করে ‘জারা স্টোর’ খোলা হচ্ছে বিশ্বের কোথাও না
কোথাও।
আমানসিত্ত ওর্তেগা যেমন অর্থবৈভবের মালিক
হয়েছেন, তেমনি সুবিদিত তার উদারতা। মজার বিষয় হলো সাধারণ জীবনযাপন করা
অসাধারণ এই মানুষটি ১৯৯৯ সালের আগ পর্যন্ত মানুষের জানার আড়ালেই ছিলেন।
ফ্যাশন জগতের এ মানুষটি যেন ‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়া রূপকথার গল্পের নায়কের
মত। আড়ালে থাকতে পছন্দ করা ওর্তেগা আবেগী কণ্ঠে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
এতো সম্পদ আর সফলতা ভালো লাগে না।
এখন বয়স হয়েছে, তাই ব্যবসা নিয়ে নতুনভাবে
ভাবতে শুরু করেছেন ওর্তেগা। মেয়ে মার্থার নামে তার সব সম্পত্তি উইল করে
দিচ্ছেন তিনি। ব্যবসা নিয়ে তার দর্শন হচ্ছে, ‘ব্যবসায়িক মডেল সর্বদা চালিত
হয় গ্রাহক সন্তুষ্টি দ্বারা।