আজ ২৪ মে বিশ্ব সিজোফ্রেনিয়া দিবস

 


পরিচয় হিসেবে বলতে গেলে তিনি একজন স্বল্প পরিচিতা তরুণী। একটি কাজের জন্য তার বাড়িতে গেলে তার দুটি আচরণ খুব অদ্ভুত ঠেকে। তবে এখানে বলে রাখা ভালো যে যাওয়ার আগেই জেনে গিয়েছিলাম যে তার মাথায় নাকি ‘সমস্যা’ রয়েছে। সে যাই হোক। তিনি যে সোফায় বসে ছিলেন তার পেছন দিয়ে ড্রইং রুম থেকে ডাইনিং রুমে যাওয়ার পথ। তো পরিবারের অন্য এক সদস্যের কথায় সেই পথ দিয়ে যাওয়া মাত্রই তিনি বিকট জোরে চিৎকার করে উঠলেন। সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, “তুই আমার পেছন দিয়ে গেলি কেন? তুই আমারে জাদু করলি, তাই না? তোর এত্ত বড় সাহস!...”


পরিবারের বাকি সদস্যরা অনেক চেষ্টার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকে আসে এবং খাওয়ার উদ্দেশ্যে ডাইনিং টেবিলে সবাই মিলে বসা হয়। তার প্লেটে খাবার বাড়া মাত্রই প্লেটটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে বলতে থাকেন, “তোরা আমার খাবারে বিষ মিশিয়েছিস নিশ্চয়, তোরা আমাকে মেরে ফেলতে চাস...” এই কথাগুলো বলতে বলতে তিনি একাই রান্না ঘরে চলে যান এবং ছোট্ট একটি হাড়িতে সামান্য কিছু চাল ভাত রান্নার জন্য তুলে দেন।

উপরের এই আচরণ বা অভিব্যক্তি কোনো একজন সুস্থ মানসিকতার মানুষের হতে পারে না। এই ধরনের সমস্যাকে বলা হয় সিজোফ্রেনিয়া। এটি এক ধরনের জটিল মানসিক রোগ।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে, বিশ্বের প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই রোগে ভুগছে। বাংলাদেশেও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ এই রোগে ভুগছে।

প্রতি বছর ২৪ মে সিজোফ্রেনিয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রথমত এই রোগ সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তোলা এবং এ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা ও কুসংস্কার দূর করা।

সিজোফ্রেনিয়া কেন হয় এ ব্যাপারে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, অনেকসময় ব্রেইনের নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাসায়নিক বা নিউরোট্রান্সমিটারের অসাম্যতা তৈরি হয়। এর ফলে মানুষের চিন্তা-চেতনা, আবেগ এবং কাজের মধ্যে যে এক ধরনের যোগসূত্র থাকে তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

এছাড়াও বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টিকে প্রভাবিত করে।

মানসিক চাপ, যেমন - প্রিয়জনের মৃত্যু, চাকরি চলে যাওয়া, কোনো কারণে বসতবাড়ি হাতছাড়া হয়ে যাওয়া, বিবাহবিচ্ছেদ; শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া, মাদকসেবন।

কৈশোরের শুরুতে বা যৌবনের শেষের দিকে সাধারণত মানুষ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর বয়সের হিসেবে বললে থেকে ১৫ থেকে ২৮ বছর।

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত একজন ব্যক্তি তার নিজের মত করে একটি কল্পনার জগত তৈরি করে নেন। তিনি কাল্পনিক কোনো ব্যক্তির আওয়াজ শুনতে পান, অদৃশ্য কাউকে কল্পনা করে নিয়ে তার সাথে কথা বলেন, খাপছাড়া বা উলটাপালটা চিন্তা করেন এবং তাদের আবেগ বা ভাষাগত অনেক পরিবর্তন দেখা যায়।

সিজোফ্রেনিয়ার উপর ভিত্তি করে বেশকিছু সিনেমাও নির্মিত হয়েছে, যেমন - টেক শেলটার, শাটার আইল্যান্ড, এ বিউটিফুল মাইন্ড, দ্য নাম্বার ২৩।