নারীরা দেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর কিছু গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে নারীদের ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। সংঘবদ্ধ তৎপরতা ও মব ভায়োলেন্সে জড়িতদের প্রতি সরকারের নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে।
সমাবেশটি সারা দেশে চলমান নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া ১২ ছাত্রনেতার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ নারী শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বাতিল, মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিতকরণ ও সাইবার সুরক্ষা আইন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত হয়।
আনু মুহাম্মদ বলেন, নারীর অংশগ্রহণ ও সক্রিয়তা কমানোর জন্য কিছু গোষ্ঠী তৎপর। তারা রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের ভূমিকা বাধাগ্রস্ত করছে। আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধেও বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে শিশুসহ যে কোনো বয়স, ধর্ম, ভাষা ও জাতিগোষ্ঠীর নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এমনকি সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই উদ্বেগ কাজ করছে।
শ্রমিক জনগোষ্ঠীর অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালেও বিগত মাসগুলোতে লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছেন, কারখানা বন্ধ হয়েছে, কিন্তু সরকার কোনো দায়িত্ব নেয়নি।
বসুন্ধরা শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা থাকা সত্ত্বেও তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে ঋণের সুবিধা পাচ্ছেন। অথচ শ্রমিক, শিক্ষক ও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের দমন করতে সরকার আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিচ্ছে।
এদিকে, সমাবেশস্থলের পাশেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান দেয়। এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, দিল্লির আধিপত্য বাংলাদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়, তবে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত যে ভারত কীভাবে বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করছে। তিনি আরও বলেন, দিল্লি, ইসলামাবাদ, ওয়াশিংটন, বেইজিং বা মস্কোর কোনো আধিপত্যই বাংলাদেশে চলতে দেওয়া যাবে না।
সরকারের পেছনে থাকা ‘স্থায়ী সরকার’ সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, বহুজাতিক কোম্পানি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের আধিপত্য বজায় থাকলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার। সঞ্চালনায় ছিলেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা।
এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত ও জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক শামীম ইমাম বক্তব্য দেন।
বামপন্থী ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সংহতি জানিয়ে সমাবেশে অংশ নেন। উদীচী ও বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু করেন।