হিটলারের মৃত্যুর রহস্য: হারমান গুটেনবার্গের বিতর্কিত দাবি

 

বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তিদের একজন, যাঁর নাম স্মরণ করলে মানুষের মনে শুধু ঘৃণা আসে, তিনি হলেন অ্যাডলফ হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে যে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়েছিল, সেই হিটলার ছিলেন পুরো ঘটনায় এক রহস্যময় চরিত্র। তবে, তার মৃত্যুও রহস্যে ঘেরা। সম্প্রতি, আর্জেন্টিনার সালতা শহরের বাসিন্দা হারমান গুটেনবার্গ একটি দাবী করেছেন, যা হিটলারের মৃত্যু সম্পর্কিত নতুন রহস্য উন্মোচন করেছে।

আর্জেন্টিনার এল প্যাট্রিওটা পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ১২৮ বছরের বৃদ্ধ হারমান গুটেনবার্গ দাবি করেন, তিনি আসলে অ্যাডলফ হিটলার, এবং ১৯৪৫ সালের পর তিনি আর্জেন্টিনায় পালিয়ে আসেন। সেখানে তিনি নিজের নাম বদলে হারমান গুটেনবার্গ রেখেছিলেন এবং জার্মান বাহিনীর গেস্টাপোর সাহায্যে একটি নকল পাসপোর্ট তৈরি করেন।

হারমান গুটেনবার্গ আরও জানান, তিনি দীর্ঘ ৭০ বছর আত্মগোপন করেছিলেন এবং এর পাশাপাশি ইসরায়েলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদে গুপ্তচর হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে মোসাদের মূল কাজ ছিল যুদ্ধাপরাধী নাৎসি নেতাদের খুঁজে বের করা। ১৯৬০ সালে নাৎসি বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল অ্যাডলফ এইচম্যানের গ্রেপ্তারে তিনি কিছুটা সহায়তা করেছিলেন।

তবে, গুটেনবার্গের এমন দাবি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর ৫৫ বছর বয়সী স্ত্রী অ্যাঞ্জেলা মার্টিনেজ বলেন, তাঁর স্বামী আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত, এবং সেজন্যই তিনি এমন মিথ্যা দাবি করছেন। তবে অ্যাঞ্জেলা মনে করেন, গুটেনবার্গ সম্ভবত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীতে ছিলেন এবং সেই বর্বরতাকে নিয়ে তিনি অনুতপ্ত।

তবে, গুটেনবার্গের দাবিকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এইরেসের একটি বাড়ির গুপ্ত কুঠুরিতে পাওয়া গেছে নাৎসিদের ব্যবহৃত কিছু জিনিস, যা গুটেনবার্গের দাবির সপক্ষে ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া, ২০১৬ সালে প্রকাশিত এবেল বাস্তির লেখা হিটলার ইন একজাইল বইতে দাবি করা হয়েছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর হিটলার আর্জেন্টিনায় চলে যান এবং সেখানে ১০ বছর আত্মগোপন করে ছিলেন। এরপর তিনি প্যারাগুয়েতে চলে যান এবং ১৯৭১ সালে সেখানেই মারা যান।

এফবিআইয়ের প্রতিবেদনেও এই দাবি সমর্থন পায়, যেখানে বলা হয় যে হিটলার আর্জেন্টিনায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও ইতিহাসে বলা হয়েছে যে, ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল হিটলার আত্মহত্যা করেছিলেন, তবুও কিছু ইতিহাসবিদের মতে, তিনি আর্জেন্টিনায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, যদি হিটলার বেঁচে থাকতেন, তবে তাঁর বয়স এখন ১২৮ বছর হতো, এবং কাকতালীয়ভাবে হারমান গুটেনবার্গের বয়সও ঠিক একই।

গুটেনবার্গের দাবি যদি সত্যি হয়, তবে এটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। তিনি ৭০ বছর আগে ঘটে যাওয়া যুদ্ধের ঘটনা কীভাবে এত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারেন? গুটেনবার্গ জানিয়েছেন, তিনি এখন হিটলারের আত্মজীবনী লেখার কাজ শুরু করবেন, এবং সম্ভবত সেখানে এসব রহস্যের উত্তর মিলবে।