এক নববিবাহিতা স্ত্রী বিয়ের পরপরই তার স্বামীর সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে চলে যেতে বাধ্য হল। শহরের আরামদায়ক পরিবেশে বেড়ে ওঠা মেয়েটির জন্য এই জায়গাটি ছিল সম্পূর্ণ অপরিচিত—শুষ্ক, নিরানন্দ, জনহীন এক মরুভূমি। তাদের থাকার জন্য যে পুরোনো চালাঘরটি দেওয়া হয়েছিল, সেটিও তার মনঃপূত হয়নি। আশপাশের আদিবাসী প্রতিবেশীরা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির, এবং তারা কেবল নিজেদের ভাষায় কথা বলত, যা মেয়েটির পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না।
প্রচণ্ড গরম, নিঃসঙ্গতা, ভাষার অসুবিধা—সব মিলিয়ে মেয়েটির মনে হল, এখানে সে এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না। কিছুদিন পর যখন তার স্বামী কাজের প্রয়োজনে কয়েক দিনের জন্য দূরে চলে গেল, তখন তার অসহায়ত্ব আরও বেড়ে গেল। একাকীত্ব সহ্য করতে না পেরে সে তার মাকে চিঠি লিখল:
"আমি এখানে আর থাকতে পারছি না। এই মানুষগুলো, তাদের ভাষা, সংস্কৃতি—কিছুই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমি খুব দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে চাই।"
কিছুদিন পর তার মায়ের কাছ থেকে উত্তর এলো। চিঠিতে শুধু একটি ছোট উক্তি লেখা ছিল—
"দুইজন লোক কারাগারের ফটক দিয়ে বাইরে তাকাল।
একজন দেখল কাদা, আর অন্যজন দেখল আকাশের তারা।"
মাত্র কয়েকটি শব্দেই যেন মেয়েটির দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেল। সে বুঝতে পারল, তার সমস্যা পরিবেশ নয়, বরং তার দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে কষ্ট দিচ্ছে। এবার সে সিদ্ধান্ত নিল, নিজেকে বদলাবে।
সে ধীরে ধীরে আদিবাসী প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে শুরু করল, তাদের ভাষা শেখার চেষ্টা করল, তাদের সংস্কৃতি বুঝতে আগ্রহী হল। যে মরুভূমিকে সে একঘেয়ে, শুষ্ক ও নিরানন্দ মনে করত, এখন সে তার মধ্যেই সৌন্দর্য খুঁজে পেল—সূর্যাস্তের রঙ, রাতের বিস্তীর্ণ আকাশ, বালিয়াড়ির ছন্দময় ঢেউ।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার মনে হল, এই স্থানই তার নতুন পৃথিবী, নতুন আনন্দলোক।
শিক্ষা:
জীবনে সবসময় কাদা না খুঁজে আকাশের তারা খুঁজতে চেষ্টা করুন। সুখ আসলে আমাদের চারপাশে নয়, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে।