‘ফাও খাওয়া’র দিন শেষ? ট্রাম্পের শুল্ক নীতির মুখে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক বাস্তবতা

 


বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ, সবাই যেন একটি অদ্ভুত বিশ্বাস পোষণ করে—আমাদের যা কিছু লাগে, তা বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে পেয়ে যাব। বিনামূল্যে জিনিস পাওয়া বা ‘ফাও খাওয়া’ যেন আমাদের জাতীয় কৌশলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু যখনই বাস্তবতা কঠিন চপেটাঘাত করে, তখনই আমরা কপাল চাপড়ে বলি, ‘এইটা কেমনে হইল?’

মার্কিন শুল্ক নীতি ও বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ঘোষণা করলেন যে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হচ্ছে, তখন অনেকেই হতবাক হলেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বাংলাদেশ এতদিন মার্কিন পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে রেখেছিল। তাহলে প্রশ্ন হলো, আমরা কি ভেবেছিলাম যে মার্কিন প্রশাসন চুপচাপ বসে থাকবে?

আমাদের পোশাক খাত নির্ভরশীল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর। অথচ আমরা সেখানে নিজেদের সুবিধার কথা না ভেবে একতরফা শুল্ক চাপিয়েই গেছি। যখন প্রতিক্রিয়া এসেছে, তখন আমাদের অর্থনীতিবিদরা এখন ভয় পাচ্ছেন—পোশাক খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। হায়রে কপাল!

অন্য দেশগুলো কি করছে? যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানি পণ্যে ২৯ শতাংশ, চীনা পণ্যে ৩৪ শতাংশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। অথচ এসব দেশ প্রতিক্রিয়াশীল বাণিজ্য কৌশল গ্রহণ করছে, নিজেদের শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন আনছে এবং কূটনৈতিক পথে সমঝোতার চেষ্টা করছে। আর আমরা? আমরা একে ‘অবিচার’ বলে হাহাকার করছি।

বাংলাদেশের করণীয় কী?

১. ‘ফাও খাওয়া’ নীতির অবসান: বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রতিটি দেশের স্বার্থ রয়েছে। বিনামূল্যে কিছু পাওয়ার মানসিকতা পরিহার করে বাস্তবমুখী বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করতে হবে।

  1. দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর উদ্যোগ: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য শুল্ক কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।

  2. বাজার বৈচিত্র্যকরণ: কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল না থেকে ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে হবে।

  3. রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি: শুধু পোশাক নয়, প্রযুক্তি, কৃষিপণ্য, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্যসহ অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

  4. স্বাধীন বাণিজ্য নীতি প্রণয়ন: বৈশ্বিক বাণিজ্যে কূটনৈতিক ও নীতিগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে।

 ‘ফাও খাওয়া’ নীতি যত দিন চালু থাকবে, তত দিন বাংলাদেশ বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকবে। এখন সময় বাস্তবতা মেনে নিয়ে কৌশলগত পরিবর্তন আনার। মার্কিন শুল্ক নীতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, শুধু আবেগ দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলে না।