ড. আবেদ চৌধুরী। বর্তমান সময়ে তার যুগান্তকারী একটি উদ্ভাবন হলো সোনালী
মিনিকেট চাল। যে চাল খেলে রক্তে শর্করা এবং সুগার কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস
অনেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
তিনি ৪টি সিলেটি আউশ ধান চেংড়ী, ধুমাই, বাউরস এবং কাচালত (কাঁচালতা) এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করেছেন।
সিলেটে এক মতবিনিময়ে মিলিত হন প্রখ্যাত এই জিন বিজ্ঞানী এবং ধান গবেষক।
ড. আবেদ জানান, ইতিমধ্যে তিনি ৩শ জাতের ধান উদ্ধার করেছেন যা প্রায়
বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো। বর্তমানে সেই ৩শ জাতের ধান তিনি একসঙ্গে তার গবেষনা
এলাকায় নিয়মিত চাষ করছেন এবং বছরে ৩ বার সেই ফসল গোলায় তুলছেন। গত ১৫ বছর
ধরে তিনি এই কাজ করে আসছেন। তিনি জানান, হাইব্রীড বলে উন্নত প্রজাতির ধান
চাষের একটি ধারনা আমাদের অনেকের মনে শক্ত আসন পেতে বসে আছে। ফলে আমরা
নিজেদের ধানগুলোকে অবহেলা করে হাউব্রীড গুলোকে গুরুত্ব দেই।
এতে করে আমাদের অনেক নিজস্ব প্রজাতির ধান বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যা ছিলো আমাদের
জন্য উপকারী। কিন্তু হাইব্রীড বলে আসলে সেরকম কিছু নেই। চাষীরা হাইব্রীডের
যেভাবে যতœ নেয় আমাদের দেশীয় প্রজাতির ধানের যদি সেভাবে যতœ নিতে পারে তবে
একই রকম ভালো ফলন এখান থেকে তোলা সম্ভব।
অষ্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের সাবেক এই মূখ্য বিজ্ঞানী
বলেন, আমরা যে ৩শ জানের ধানের চাষ করছি তা থেকে ফসল বছরে তিনবার তুলা
যাচ্ছে। এর সবগুলো আমাদের নিজস্ব জাত। তিনি জানান, আমাদের সবচেয়ে বড়ো
সমস্যা লাল রঙের চালের প্রতি আগ্রহ কম।
সবচেয়ে দরকারি চাল হচ্ছে লাল রঙের চাল। সাদা রঙের চাল বলতে কিছু নেই সব
চালই লাল। তবে মেশিনে ধান থেকে চাল করবার সময় চালের লাল অংশ চেচে ফেলে দিয়ে
সাদা এবং চিকন করা হয় আকর্ষনীয় দেখাবার জন্য। আর এতে করে অনেক পুষ্টিগুণ
থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।
তবে মানুষ যেহেতু এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে এবং আমাদের দেশের মানুষের বলতে
গেলে ভাত না হলে চলে না এবং বাংলাদেশে দিনদিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা
বাড়ছে তাই তিনি চিন্তা করলেন কি করে এর একটা সমাধানের পথ পাওয়া যায়। সেই
চিন্তা থেকে আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবন করেন এক ধরণের চাল যা সোনালী মিনিকেট নামে
পরিচিত।
এটি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অনুমোদিত। তার এইচকেজি এগ্রো থেকে
প্রস্তুত বিশেষ এই সোনালী চাল খেলে কার্বোহাইড্রেড এবং সুগার কমে যায় ফলে
ডায়াবেটিস অনেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। মূলত এই চাল তিনি উদ্ভাবন করেছেন
অন্যান্য সাদা বা চিকন চালের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার জন্য। যা মেশাতে হবে মূল
চালের সাথে ১৫ শতাংশ করে। এতে করে ঐ সাদা চালের সুগার বাড়াবার ক্ষমতা অনেক
কমে যায় কিন্তু সেই চালের সাথে যে সোনালী মিনিকেট মেশানো হয়েছে তা বুঝা
যায়না। এটা কেবল অনুবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা সম্ভব, সাধারণ চোখে নয়।
এর বাজারমূল্য অন্যান্য চালের মতো। তবে এই চাল তারা সাধারণ বাজারজাত
করছেন না। মূলত বাজারজাতের ফলে কেউ যাতে এর নকল করতে না পারে এবং উদ্দেশ্য
নষ্ট করতে না তার জন্যই এ সিদ্ধান্ত। কেউ চাল কিনতে চাইলে সরাসরি তাদের
সাথে যোগাযোগ করতে হবে, তারা ঠিকানা অনুযায়ী তা পৌঁছে দেবেন। এজন্য
০১৭৬৬-৩৭০৪৩৬ এবং ০১৭৬৬-৩৭০৭০৩ এই দুটো নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করতে
পারবেন।
আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবিত কালো চাল কালো রঙের খাবারের গুরুত্ব উল্লেখ করে ড.
আবেদ চৌধুরী জানান, কালো রঙের খাবারে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ থাকে এবং তা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তিনি তার গবেষণায় তৈরী কালো রঙের চাল,
টমেটো এবং জ্যুস সবাইকে দেখান। এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই দামি এবং যা
বর্তমানে কেবল আমেরিকা ও চীনে কিছু কিছু দেখা যায়। তারা সামনের বছর এই
পণ্যগুলো বাজারে ছাড়বার পরিকল্পনা করছেন বলে জানান, এ সময় সিনার্জি কোলা
নামে একটি কালো রঙের জ্যুসের সাথে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন। পাঁচটি উপাদানে
তৈরী এই জ্যুস শরীরের জন্য উপকারী এবং ডায়াবেটিস দ্রুত কমাতে পারে।
তবে যারা ডায়াবেটিস কম রাখবার জন্য বিভিন্ন ধরণের ওষুধ খেয়ে থাকেন তাদের
বেশি পরিমাণে এই জ্যুস না খাবার পরামর্শ দেন তিনি। এতে করে তাদের সুগার
বেশি কমে যেতে পারে। তবে যাদের চর্বি বেশি তারা এটি খেতে পারেন। এই জ্যুস
গরম করে চায়ের মতো অথবা ঠান্ডা করে শরবতের মতো খাওয়া যায়। এর বাজার মূল্য
রাখা হয়েছে ২৫টাকা। দোকানী কিংবা ডিলারের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে এর
বাজারজাত করা হবে বলে এসময় জানানো হয়।
ড.আবেদ চৌধুরী বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার
হাজিপুর গ্রামের সন্তান। তিনি মৌলভীবাজার সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি, নটরডেম
কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেজুয়েশন শেষ করেন। পরে
তিনি হাভার্ডসহ বিশ্বের অনেক নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা
করেন এবং সেখানে শিক্ষক-গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৯ থেকে
দেশের বাইরে ছিলেন।
পরে ২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত দেশে আসা যাওয়া শুরু করেন। ২০০৭ সাল থেকে তিনি
পুরোপুরি বাংলাদেশে চলে আসেন এবং কুলাউড়ায় তার পৈতৃক নিবাসে গবেষনা কাজ
চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশ মাতৃকার টানে, দেশের মানুষের কল্যাণে দারিদ্র বিমোচনে
কাজ করার লক্ষ্য নিয়েই মূলত তার এই চলে আসা বলে জানান বিশ্বখ্যাত এই
বিজ্ঞানী। অষ্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের যেসব গবেষকের নাম
নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নের জন্য তালিকায় রয়েছে ড. আবেদ চৌধুরী তাদের একজন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীর বিশ্ব অবাক করা আবিষ্কার…জানুন এবং শেয়ার করুন
By -
July 01, 2017
Tags: