আপনার নিজের নামটা কি আপনার পছন্দ?

Admin
By -


আপনার নিজের নামটা কি আপনার পছন্দ? আপনাকে নিজের নাম নিজে রাখতে দেওয়া হলে কী রাখতেন? আর সেই নামের সঙ্গে মিলিয়ে অন্য দুই ভাইয়ের নাম রাখুন।
এখন আপনার বড় ভাইয়ের নাম হুমায়ূন আহমেদ। আপনাদের দুই ভাইয়ের নামের সঙ্গে তাঁর নামের মিল নেই। মিল দিয়ে দুটো নাম রাখুন তো, আপনার আর আহসান হাবীব ভাইয়ের।
সত্যি কথা বলতে কী এ রকম একটা প্রশ্ন করা যায়, সেটাই আমার মাথায় আসেনি-প্রশ্নটা অনেকটা এ রকম, আপনার নাকটা কি আপনার পছন্দ? কিংবা -আপনার হাতের আঙ্গুলগুলো কি আপনার পছন্দ? পছন্দ হোক আর নাই হোক, এটা নিয়েই যেহেতু থাকতে হবে, শুধু শুধু এই প্রশ্ন করে লাভ আছে? (তবে প্রশ্ন করার পর চিন্তা করে মনে হলো যে নামটার ওপর মায়া পড়ে গেছে!)
আমাকে নিজের নাম রাখতে দেওয়া সম্ভবত ঠিক হবে না। কারণ আমি একেবারেই ভালো নাম রাখতে পারি না-আমার বইয়ে বিজ্ঞানীর নাম সফদর আলী, চরিত্রের নাম টুকি ঝা এবং বাচ্চা-কাচ্চার নাম নাটবল্টু। আরও বিপজ্জনক হবে যদি আমি নিজের নাম রেখে ফেলি সায়েন্স ফিকশন টাইপের-যেমন ধরা যাক, কিউ এক্স এক্স ৭২২! (তাহলে অবশ্য অন্য ভাইদের নাম রাখার প্রক্রিয়াটা সহজ হয়ে যায়-একজন কিউ এক্স এক্স ৭২৩, আরেকজন কিউ এক্স এক্স ৭২৪!)
হু-মা-য়ূন আহমেদ।
হু-খালা-য়ূন আহমেদ।
হু-ফুফু-য়ূন আহমেদ।
ববিতা, শাবানা ও কবরী-তিনজনের মধ্যে আপনার প্রিয় কে? কেন?
রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনের মধ্যে কে প্রিয়?
গ্রেটা গার্বো, অড্রে হেপবার্ন আর ইনগ্রিড বার্গম্যানের ভেতর কে প্রিয় জিজ্ঞেস করেননি সে জন্যই অনেক ধন্যবাদ। (ববিতা, শাবানা ও কবরী তিনজনই আমার প্রিয়। রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনও!)
লোকে কি আপনাকে সিনেমার নায়ক জাফর ইকবালের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছিল! এই নিয়ে কোনো মজার ঘটনা?
এই দেশে মেলায়নি। তবে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন আমার নাম শুনে অনেকেই মুচকি হেসেছে!
যখন আমেরিকায় ছিলাম তখন একজন বাংলাদেশ থেকে এসেছে, এসে খবর পেয়েছে -জাফর ইকবাল- এই শহরে আছে। নায়ক জাফর ইকবাল মনে করে সে পাগলের মতো আমাদের বাসায় ছুটে এসেছিল! নায়ক জাফর ইকবালের জায়গায় আমাকে দেখে তার এত আশাভঙ্গ হয়েছিল যে আমার এখনো তার জন্য মায়া হয়! বেচারা আমার ওপরেই রেগে উঠেছিল, যেন আমিই তাকে ঠকিয়ে দিয়েছি।
আপনি কি ভুলোমনা! ইয়াসমিন হকের কাছে শুনে আপনার ভুলোমনের ঘটনা থেকে দুই-একটা!
আমি মোটেও ভুলোমনা নই। হ্যাঁ, কী যেন জিজ্ঞেস করছিলেন?
আপনি ভয় পান···
মাকড়সাকে। (আমি বাঘের সঙ্গে এক খাঁচায় থাকতে পারব কিন্তু মাকড়সার সঙ্গে নয়।)
আপনার স্ত্রী, পুত্র-কন্যা আর মা-বাবা যেসব গোপন নামে আপনাকে ডাকে! ডাক নামগুলোর মধ্যে আপনার পছন্দ!
না, আমার কোনো গোপন নাম নেই। আমার সব ভাইবোনের একটা করে ডাক নাম আছে, আমার নেই। আমার বাবার ডায়েরি থেকে আমি জানতে পেরেছি আমাকে একটা ডাক নাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সেটা কাজ করেনি। বাসায় আমাকে ইকবাল ডাকে, আমার স্ত্রী ডাকে তাফর, ছেলেমেয়েরা ডাকে আব্বু।
এখন অবশ্য আমার নতুন একটা নাম হয়েছে। ঠিক কী কারণে জানা নেই, সবাই আমাকে স্যার ডাকে! যাঁরা বয়সে আমার থেকে বড় তাঁরাও মাঝেমধ্যে আমাকে স্যার ডেকে ফেলেন। মনে হয়, এটা বুঝি সম্বোধন নয়, যেন এটাই নাম!
আপনি যেদিন বোকা বনে গিয়েছিলেন।
শুধু আমি নই, বাংলাদেশের সব মানুষ বোকা বনে গিয়েছিল, যেদিন আমাদের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমার ধারণা, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদও বোকা বনে গিয়েছিলেন, যখন ১১ জানুয়ারি ২০০৭ তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতাটি দিয়ে সব ষড়যন্ত্রের কথা জাতির সামনে অকপটে স্বীকার করতে হয়েছিল।
ছোটবেলায় ধরা খেয়েছিলেন এ রকম কোনো ঘটনা!
ছেলেবেলায় আমি খুবই হাবাগোবা ছিলাম, তাই আলাদাভাবে কখনো ধরা খেতে হয়নি। আমি মোটামুটিভাবে সব সময় ধরা খেয়েই থাকতাম।
রস+আলোর সম্পাদক বানানো হলে আপনি কোন গোপন ফমুêলা ব্যবহার করতেন।
হাসি-তামাশায় আবার কেউ বিরক্ত না হয়ে যায়, সে জন্য কোনো হাসি-তামাশা করতাম না। কারও অনুভূতিকে আঘাত করবে সেই ভয়ে কোনো লেখালেখি ছাপাতাম না। প্রতি সংখ্যাই বের হতো সাদা কাগজ দিয়ে-স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা সেটাকে তাদের লেখাপড়ার কাজে ব্যবহার করতে পারবে, দেশের একটা উপকার হবে। হাসি-তামাশা করে বিপদে পড়ে লাভ আছে?
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনন্যা হক

************************
দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ ডিসেম্বর ২০০৮