বাতের ব্যথা
থেকে মুক্তি পেতে ৫ টি ঘরোয়া উপাদানের ব্যবহার
ভালো করে খোঁজ নিলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একজন
করে বাতের ব্যথায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ রকমের বাতের
ব্যথার রোগ পাওয়া যায়, তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বাত জনিত ব্যথাকে (arthritis) অন্যান্য রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
আবার এমনটাও দেখা যায় বাত বংশগত ভাবেও হয়ে থাকে। ডাক্তার
বাতের ব্যথায় ওষুধ দিলেও সেসব ওষুধের নানা ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ায় ঘরোয়া
ভাবে এর উপশম করাই শ্রেয়।
- আদা (Ginger): চীনে ও ভারতে গত ২৫০০০ বছর থেকে আদাকে ব্যথা উপশমকারী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ আদা চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে আপনার বাতের ব্যথা অনেকাংশে কমে আসবে।
- গরম পানি দিয়ে গোসল (warm water bath): আপনার যেকোন ধরণের ব্যথা কমাতে গরম পানির তুলনা হয়না। সেই সূত্র ধরে বাতের ব্যথা কমাতে আপনি গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। যারা অতিরিক্ত বাতের ব্যথায় আক্রান্ত তারা নিয়মিত গরম পানি দিয়ে গোসল করে দেখুন ব্যথা কমে যাবে।
- পেপারমিন্ট (peppermint): আমরা অনেকেই জানি যে পেপারমিন্ট মাথা ও দাঁতে ব্যথায় দারুণ কাজে দেয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে এটি বাতের ব্যথার কষ্ট কমাতেও খুব কাজ করে। তাজা পাতা শুকিয়ে দুই তিনটি পাতা দুই কাপ পানিতে দিয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট জাল দিয়ে সেটিকে এক কাপ পরিমাণে এনে এই পানীয় টুকু পান করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার বাতের ব্যথা কমে আসবে।
- দারুচিনি ও মধু (cinnamon and honey): দারুচিনি ও মধুর সম্মিলিত উপাদান বাতের ব্যথায় খুব কার্যকরী। এক টেবিল চামচ মধু ও হাফ টেবিল চামচ দারুচিনি পাউডার এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন নাশতার আগে গ্রহণ করলে বাতের ব্যথা কমে যায়। আপনার ব্যথার পরিমাণ অনুযায়ী দারুচিনি ও মধুর মাত্রা বাড়াতে পারেন।
- হলুদ (turmeric): বাতের ব্যথার অন্যতম সহজলভ্য ঘরোয়া প্রতিষেধক হলো হলুদ। এটি এমন একটি উপাদান যা সবার বাড়িতেই পাওয়া যায়। কিছু সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে হলুদের ব্যথা বিরোধী ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য সমূহ বাতের ব্যথার উপর সরাসরি কাজ করে।
যেখানে সামান্য একটু চেষ্টা করে আপনি ঘরোয়াভাবে বাতের (arthritis) ব্যথার
প্রতিকার করতে পারেন সেখানে আর ব্যথা কষ্ট না করে উপরের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে
দেখুন।
বাত রোগের চিকিৎসা
ব্যায়াম বিশ্রাম, তাপ, ঠাণ্ডা এবং অন্যান্য শারীরিক থেরাপির সাথে ওষুধ হলো রিউমাটয়েড
আর্থ্রাইটিস ও অস্টিও-আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি প্রধান অবলম্বন। ওষুধ ব্যথা ও প্রদাহ
সারাতে সাহায্য করে এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে অস্থিসন্ধির ক্ষতি
প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
বাতরোগের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ভিন্ন ভিন্ন জাতের ওষুধ রয়েছে। চিকিৎসকের সাধারণভাবে এসব ওষুধকে প্রথম সারি ও দ্বিতীয় সারির ওষুধ নামে ভাগ করেছেন।
প্রথম সারির
ওষুধগুলো সাধারণত প্রথমেই চেষ্টা করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: নন-স্টেরয়ডাল
অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগস (এনএসএআইডি) যেমন- অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রফেন এবং কিছু
প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। এ ওষুধগুলো অস্টিও-আর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের
চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। প্রথম সারির ওষুধগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে
বিশেষভাবে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এর সাথে স্টেরয়েড ওষুধ যেমন- প্রেডনিসলোন ও কর্টিসোন ব্যবহার করা হয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার
কারণে স্টেরয়েডকে সত্যিকার অর্থে প্রথম পছন্দনীয় ওষুধ হিসেবে ধরা হয়না।
অস্টিও-আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ওষুধ তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। কারণ এ
ক্ষেত্রে স্টেরয়েড কোনো সাহায্য করে না এবং স্টেরয়েডের অনেক মারাত্মক
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
যেহেতু
অস্টিও-আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় তারা কার্যকর নয়, তাই দ্বিতীয় সারির ওষুধগুলো শুধু রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় সারির ওষুধগুলোকে কখনো কখনো ডিজিজ
মডিফাইং বা ডিজিজ রেমিটিভ ড্রাগস বলা হয়। কারণ এসব ওষুধ অনেক লোকের উপসর্গ কমিয়ে
দেয়। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে- গোল্ডসল্ট, ইনজেকশন বা ট্যাবলেট আকারে; হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন, এটি ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায়ও ব্যবহূত হয়; পেনিসিলামাইন, এটিকে প্রসি- অ্যান্টিবায়োটিকের
জ্ঞাতি ভাই বলা হয় এবং মিথোট্রিক্সেট ও অন্যান্য ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগ যা
ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসক কোন ওষুধ ব্যবহার করবেন সেটা বুঝবেন কীভাবে : এটা নির্ভর করে ওই চিকিৎসকের দীর্ঘ সময়ের শিক্ষা, কিছুটা গবেষণা, কিছুটা জরিপ এবং কিছুটা ক্লিনিক্যাল
অভিজ্ঞতার ওপর। একজন রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় কাজ করে।
এসব বিষয়ের
মধ্যে রয়েছে: রোগীর বয়স, রোগীর কাজকর্মের পরিধি, অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা
আছে কি না, রোগী নতুন ওষুধ গ্রহণের কিছু ঝুঁকি নেবেন কি না অথবা
পুরান ওষুধের সাথে চালাতে চান কি না, ওষুধ দেয়ার পরপরই কী
ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে, রোগের উন্নতি কেমন হচ্ছে, রোগীকে কী ধরনের পর্যবেক্ষণ পরীক্ষা করা হচ্ছে ইত্যাদি। চিকিৎসক রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার আগে এসব বিষয় বিবেচনা করবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি রোনো রোগীর বিশেষ
করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের খারাপ ধরন থাকে, তাহলে চিকিৎসক তাকে প্রথম দেখেই সরাসরি দ্বিতীয় সারির ওষুধ দিতে পারেন। আরেকটা বিষয় চিকিৎসক ও রোগীর মনে একই সাথে উদয় হতে পারে যে, বেশির ভাগ আর্থ্রাইটিসের
লোকের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে যেকোনো আর্থ্রাইটিসের ওষুধ ভালোকাজ করে।
কিন্তু কয়েক বছর পর ওষুধের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার
মুখোমুখি হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। এক্ষেত্রে ওষুধ পরিবর্তন করে অন্য ওষুধ কিংবা
সমন্বিত ওষুধ দেয়া হয়।
প্রথম সারির
ওষুধ নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ বলতে কী বোঝায়?
নামেই বোঝা
যাচ্ছে, এনএসএআইডি হলো সেইসব ওষুধ যা প্রদাহের যেমন- ব্যথা, ফোলা,
তাপ ও লাল হওয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। এরা শরীরে উৎপন্ন কিছু জৈবরাসায়নিক উপাদানকে প্রতিরোধ করার মাধ্যমে এ কাজটি করে।
এ জৈবরাসায়নিক
উপাদানের নাম প্রোস্টগ্লানডিন, যা প্রদাহ ঘটায়। যা হোক, নন-স্টেরয়ডাল
অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ড্রাগ বা এনএসএআইডি স্টেরয়েড ওষুধ থেকে স্বতন্ত্র। স্টেরয়েড
ওষুধও ব্যথা এবং প্রদাহ কমায়, তবে সেটা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে
এবং এর রয়েছে অনেক ভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
এনএসএআইডি’র
মধ্যে কম ভিন্ন গ্রুপের ওষুধ রয়েছে: অ্যাসপিরিন (অ্যাসিটাইল স্যালিসাইলিক অ্যাসিড)
ও সম্পৃক্ত উপাদান, যেমন- সোডিয়াম স্যালিসাইলেট, আইবুপ্রফেন এবং এক
ডজনের বেশি অন্য রাসায়নিক উপাদান। যদি আপনার চিকিৎসক আপনাকে একটি এনএসএআইডি ওষুধ গ্রহণের
পরামর্শ দেন এবং সেটা কাজ না করে, তাহলে তিনি আপনাকে ভিন্ন রাসায়নিক গ্রুপের ওষুধ দিয়ে চেষ্টা
করতে পারেন।
বাতরোগ ও তা নিরাময়ের উপায়
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাতরোগ আমাদের একটি বড় সমস্যা। এই বাতরোগ ও তা নিরাময় কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে জানার জন্যই এই আলোচনা।বাতরোগ এবং ব্যথা একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যার বাতরোগ আছে তার ব্যথা রয়েছে। তবে শুধু যে ব্যথা থাকলেই যে বাতরোগ থাকবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সামান্য একটু আঘাত লাগলেও ব্যথা হতে পারে। যা কোন বাতরোগ নয়। বাতরোগ বয়ষ্কদের সাধারণত বেশি দেখা যায়।
মেডিসিনের বিখ্যাত লেখক ও বিজ্ঞানী স্যার স্ট্যালিন ডেবিডসনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৪০ জন বয়ষ্ক মানুষ কোন না কোন বাত জাতীয় রোগে ভুগছেন। বাংলাদেশে এই রোগীর অগণিত।
এই পর্যায়ে আমরা প্রধান কয়েকটি বাতরোগের নিরাময়ের উপর আলোচনা করবো।