শনিবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে৷ হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে৷ তবে এখনো তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷’’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা জঙ্গি হামলা বলেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে৷ তবে এই মুহুর্তে আমাদের কাছে ড. জাফর ইকবালের চিকিৎসাই গুরুত্বপূর্ণ৷’’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়৷
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় গত শুক্রবার থেকে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠান চলছিল৷ শনিবার বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে এর উদ্বোধন করেছিলেন ড. জাফর ইকবাল৷ বিকেলে এর সমাপনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে৷
ড. জাফর ইকবালের ব্যক্তিগত সহকারী জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন যে, মাথায় আঘাতের পাশাপাশি গলায় দুটি ছুরিকাঘাতের আঘাত রয়েছে৷ আঘাতের পর সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে এক চিকিৎসক জানান, ড. ইকবালকে নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে৷
প্রাথমিক অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আশঙ্কামুক্ত মনে হচ্ছিল৷ তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে উচ্চ চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক রাশেদ তালুকদার জানিয়েছেন, মুক্তমঞ্চ এলাকায় পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ড. জাফর ইকবালের মাথায় আঘাত করা হয়৷ তবে সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে৷
হামলাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না-কি বহিরাগত তা এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি৷ তবে সে ‘বহিরাগত’ বলেই সন্দেহ করছেন প্রত্যদর্শীরা৷ হামলাকারীর বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর৷ সে সিলেট শহরের একটি কম্পিউটারের দোকানের কর্মচারী বলে কয়েকজন ফেসবুকে উল্লেখ করলেও পুলিশ তা নিশ্চিত করতে পারেনি৷
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হামলাকারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আটক করেছে৷ তবে উত্তেজিত ছাত্রদের কারণে তাকে আনা যাচ্ছে না৷’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ইলিয়াসুর রহমান বিশ্বাস হাসপাতালে উপস্থিত সংবাদ মাধ্যমকে জানান, যে ছেলেটি স্যারকে আঘাত করেছে, তার রাজনৈতিক পরিচয় এখনও জানা যায়নি৷ এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-২ এর সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা৷
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীতেও বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে৷
ড. জাফর ইকবাল বরাবরই জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ৷ কয়েক বছর আগে লেখক, অধ্যাপক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর জঙ্গি হামলার সময় তিনিও হুমকি পাচ্ছিলেন৷ তখন তাঁর পাহারায় পুলিশ মোতায়েন করে সরকার৷
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন জাফর ইকবাল৷ র্যাগিংয়ের দায়ে পাঁচ ছাত্রের শাস্তি দেওয়া হলে তিনি বলেছিলেন, এদের শাস্তির পরিমাণ কম হয়েছে, তাদের পুলিশে দেওয়া উচিৎ৷ হামলার পর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেছে৷
Source Link: Click Here