এবার আগেভাগেই হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় বাড়ছে। চিকিৎসকরা জানান, সাধারণত জুন-জুলাই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে।
কিন্তু এবার মে মাসের প্রথম ২০ দিনেই চারশো'র বেশি রোগী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় চারগুণ। তাই এবার ডেঙ্গু রোগী বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চলতি মাসের গেলো ২১ দিনে শুধুমাত্র এই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী।
সাধারণত জুন জুলাইয়ে বর্ষার সময়টাতে ডেঙ্গু রোগী বাড়ে। কিন্তু এবার মে মাসেই রোগী বাড়ার লক্ষণ চিকিৎসকদের বিস্মিত করেছে। আর আতঙ্কে রয়েছে শহরবাসী।
২০২২ সালের মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন। আর এ বছর একই সময়ে সেই সংখ্যা বেড়েছে ছয় থেকে সাত গুণ।
ঢাকার প্রতিটি হাসপাতালেই রোগী বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারিতে রোগী ছিলো ৫৬৬ জন। ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে ছিলো যথাক্রমে ১৬৬, ১১১ ও ১৪৩ জন।
আর, মে মাসের প্রথম ২০ দিনেই রোগী এসেছে ৪২৮ জন। যা গেলো বছরের একই সময়ের তুলনায় চারগুন বেশী। যা ভাবিয়ে তুলছে চিকিৎসকদের।
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শফিকুর রহমান জানান, তাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে গেলো কয়েক বছর ধরেই এই মৌসুম পাল্টে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, এডিস মশার জীবন চক্র পাল্টে যাওয়া ও মশারা প্রচলিত ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে যাওয়াকেই এর কারণ বলছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এবার যে ধরন আমরা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে এই বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের তুলনায় বাড়বে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে আছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। এছাড়া আছে পানি প্রবাহের সিস্টেম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
সব মিলিয়ে মৌসুম যেমন ছিল সেটি হয়তো থাকবে না। ডেঙ্গুর পিক সিজন আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাস। কিন্তু গতবছর তার ব্যতিক্রম ছিল, পিক হয়েছিল অক্টোবর মাসে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গুর রূপ বারবার বদলাচ্ছে। ২০১৯ সালে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায় বাংলাদেশে।
সেই বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছিল মে মাসের শেষে। সেই প্রকোপ কমেছে পরের বছরের জানুয়ারিতে।
ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব শহরে বেশি হলেও ২০২২ সালের পরিসংখ্যান বলছে, রোগী বাড়ছে রাজধানী ঢাকার বাইরেও। ডেঙ্গু এখন সারাদেশেই ছড়িয়েছে।
গেলো বছর মোট ৬২ হাজার ৩৮২ ভর্তি রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরের রোগী ছিল ২৩ হাজার ১৬২ জন। এর বাইরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৩৫২ জন।
তাই এডিস মশার উৎসব ধ্বংস করার ব্যাপারে নাগরিকদের সচেতনাতেই একমাত্র উপায় বলছেন বিশেষজ্ঞরা।